Saturday 16 February 2008

অচেনা বন্দরের প্রতি প্রেম হলো আবিষ্কারেচ্ছার জনয়িত্রী

প্রথমেই চোখে পড়ে ঘাসায়িত ছায়া, যে দুপুরে বাতাস ছিল মৃদু কম্পনসহ, কুহুটুহু তো ছিলই, মননের মূর্ছনামুহূর্তব্যাপে বাহারি উল্লাস, দিগন্ত জেগে ওঠে আত্মআয়নায়, এটি কোনো রন্ধনকার্য বা প্রণালি নয় তাকাগি ক্যায়জুর, আগুনে মূর্তিত ধাপ ধাপ সিঁড়ি, এক পদে দুই পদে চূড়া, চূড়া থেকে পৃথিবীর রূপারূপ ছোট হয়ে যায়

অহঙের ব্যাখ্যা হয় আত্মজনোচিত

২.
এরপরও কিছু কাজ বাকি থেকে যায়, এরপরও, সৃজনী পাথরগুলো একে একে গেঁথে নিয়ে যে প্রাসাদ স্বপ্নে গড়েছি এতকাল, তারে দিতে হবে দৃশ্যগুণ, দূর পাহাড়ের থেকে পাখা মেলে যে পাখিরা এইদিকে, বাতাসের পাশাপাশি ধাবমান, তাদের বিশ্রাম লাগি উপরে বানাতে হবে কূজনিত চূড়া

হাজার বছর ধরে জমা যত মানুষের সুখ, যা ছিল হাস্য-আনন্দফুল, আর যত দুঃখকথামালা, আশাবরি পাখা, আমার প্রাসাদে ওরা রয়ে যাবে, আমি কান পেতে রব, আমি ঘুমাব না, মানুষের এতকিছু সুখ-দুখ, এতকিছু কামনা-বাসনা যদি আমার প্রাসাদে থাকে, পাথরখণ্ড জুড়ে যদি থাকে স্পর্শেরা, নিজের করে কিছু চাই না হে

এ-ও ভাবি, এতসব গীতিময় হাহাকার পৃথিবীর, এতসব চিৎকার চ্যাঁচামেচি পায়ে ঠেলে আমি একা গোপন প্রাসাদ গড়ে কোন সে সুখের দেব ডিম, হা-হা ডিম, হাতি নয় ঘোড়া নয় মানুষের ডিম, সেই ডিমে কোন সে মানুষী এসে তাপ দেবে, সেবা দেবে, তার থেকে বের হয়ে তেপান্তরের মাঠে উড়ে যাবে কেমন সে পাখি, তারে ধরব কেমনে বল বাঁধব কেমনে

পাখিদের পাখা হলো সব, পাখার মুক্তি তার বৃথা গেলে, মিছে হয় পাখির জনম, এই হলে আমি তবে ডিম দিয়ে করব কী, করছি কী, এর চেয়ে হাতে পায়ে শিকল প্যাঁচিয়ে থাকা ঢের ভালো, আরো ভালো নিজে উঠে পরকে বসতে দেয়া, ডিম নয় পাখি নয় নিজেদের করে, অপরের সবগুলি কান্নাকণামালা, নিজস্ব বোধ দিয়ে ছুঁয়ে ছেনে দেখা, বাহারি প্রাসাদ গড়া ও অন্যকে ছেড়ে দিয়ে দরোজায় সযতনে নির্ঘুম থাকা, এইসব কাজ আমার বাকি রয়ে গেছে

৩.
থামো মুঠো মুঠো, রাশি জল রাশি আলো, কেন্দ্রিত ছিলে যাহা জগদীশ্বরে, নিসর্গ চুম্বিত বনে, বর্ণিল বহু আলেখ্য গানে, বাঁকে বাঁকে তেলে আর জলে, যাকে বলে মিইয়ে পড়া ভবিষ্যৎ, যাকে বলে মরে পড়ে থাকা, স্তব্ধ বেহুশ ঘুমে আলুথালু, মনের মরমিপনা চেপে রেখে, আলোর চেরাগগুলো দুইহাতে স্থির

কী তবে মুখর দিনের ভোরে জেগে উঠে বাতাসে সৃজনবীণা বাজানো, মহীয়ান কীসে হওয়া তবে, কর্মগাথাগুলো বিস্ময়ে সাধা, সুরকণা ভাঁজে ভাঁজে যদি থাকবে না, কোন আড়ে গাঁথা তবে সৃজনের চাবি, চালের বুতায়, কলকল নদীর সাম্পানে, ধোঁয়ার জ্বালা লুকিয়ে গতরে তবু, ঠমকে চমকে বেড়ে ওঠা, জেগে-ফুঁসে মহীয়ান নই যদি, আমি তবে ঘোরগুলি কীসে অনূদিব, গাইব কীসের গান, কেন গাব, যদি মহিমাই চিত্রিত নেই, শুচিবায়ুগ্রস্ততা নেই যদি...

আনি শুভ্রতা নদীর তীরের দেশে ঘুমুতে বানের জলে, এইকথা কানে কানে শোনা গেছে, স্বপ্ন রচনা করতে ফিরে গেছে পিতার জেদের ঘুড়ি, মাঝপথে সুতা ছেঁড়া একটি গাছের জন্ম প্রশ্নের মুখোমুখি ফেলে রেখে নিষিদ্ধ আনন্দ লাগি রাত জাগি, সবাই নেশার পাগল যদি কাজ তবে কারা করে যাবে

কোনো বলা-কওয়া নেই, বাচালতা নেই, লিখে যেতে হবে, লিখে লিখে কোনোমতে, ঘোর জন্মের মতো, কল্লোল জাগাতে হবে বনে বনে, কাহালু হৃদয় স্রোতে, রূপসংকট বেলায়, স্বরূপের মহিমাই বড় হয়ে ওঠে

শহুরে কুকুরকুলের গলাবাজিগীতি, তার সাথে পেরে ওঠা লাগে, অচিৎকৃত সুরে সুরে ভাসানো মন্দিরে ফুল হাতে দাঁড়িয়ে থাকে বাসন্তী দিন, ফাগুন ভরা দিঘিতে নেমে ডুব দেয় গহন কষ্টেরা, তবু হৃদয় দেবার বেলা আশঙ্কায় কলাপাতা মন কাঁপে, ঠিক সন্ধ্যাবেলা বুকে এসে লাগে ঘোর ছ্যাঁকা, ঠিক বুকে লাগে, রক্তপ্রবাহে ভেসে যায় অবিনাশী হৃদয় ফোরাত, কী করে মিটবে তবে দূরাগত পথিকের পানীয় তৃষ্ণা

৪.
জয় হে মঙ্গলাচরণ, জয় হে নিজাধীন মন সদা প্রফুল্লতা, জয় সৃজনে ডুবে থাকা টুটি চাপা রাত, জয় তথাকথিত আনন্দ ক্ষণের স্তন

যে যারে ভালো জানে সে উৎসাহী চঞ্চল, যে যারে জেগে রয় ভাবে সে রুচিবাগীশ, যে যারে অবজ্ঞা হানে সে যোগ্য নয়, হেন কাজে মক্ষিকা গুন গুন, বাগান ত্যাগিয়া আসে নিবিড় সঙ্গমে, দূর নয় কাছে, রূপার কলসিতে সুপেয় যে জল, সে জল পিয়াতে লাগে হ্রাসিত বেদনা, সহজে বিকিয়ে যাওয়া উত্তাপ নিয়ে বনের ভাদরগুলো, চনমন স্বস্তির গায় ভেজা গান

রক্তিম জানান যেটা, আমিও মশগুলা চারপাশে, আমিও তাড়িয়ে খুঁজি পথ, পথ মানে সামনে চলা যুদ্ধ করে করে, রাত জেগে এইসব পথচলা গবেষণা জরুরিই, প্রয়োজন বিশাল প্রান্তরে নিজেকেই অশেষ সন্ধান, নিজেকে জানার এই চেষ্টাটা কালে কালে ছিল, সবাই কেননা বুঝে নেয় তার মতো করে, এরা সব পায়ে ঠেলে, নিজেই নিজেরে ধরে মারে, সবার জন্য মাগে দাঁড়িকমাশ্বাস, উল্লাস ঘনঘোর, শেষে নিজের জন্যে শুধু ‘কিছুই না’ থাকে

No comments: