Saturday 16 February 2008

প্রকৃত বীক্ষণকৌশলী হতে পারা একটি বিরল গুণ

প্রথম দৃষ্টিলগ্নে কারো কোনদিকে তাকাতে হয়-- চোখের, মুখের নাকি অন্য কোনো উপাঙ্গের নৈবেদ্যে, কখনো জানে না সে, তাকানোর কাজবাজ কখনো কোনো ব্যাকরণের নিয়ম মেনে করা হয় নি তার, যখন যেভাবে থেকেছে, মন চেয়েছে যেভাবে, সেভাবে চেয়েই এ বড়ো জগৎসংসার চিনেছে-বুঝেছে, মনে রাখতে পারে নি কারো চেহারা, মানুষের মৌলদর্শন-গুণ কীসের মানদণ্ডে নির্ধারিত হয় জানে না তা, এমনিতেই যদি খাপে-খাপে মিলে যায় তো অদৃশ্যে ছাপ পড়ে, ভোলা যায় না

যে রাতে চন্দ্রালোক তার হাত ধরে কুয়াশার বেড়াজাল ভেদ করে প্রান্তরের পথ ধরে বাড়ি পৌঁছে দিয়েছিল, সে চাঁদে আর এ চাঁদে বিস্তর ফারাক বলে মনে হয় তার, কখনো কোথাও কেউ দেখেছে কি না এরে বুঝতে পারে না, অন্তরাতে বাঁশবনে হেঁটে হেঁটে আলোর শয্যায় তার মনে হয়, এ বুঝি সবচে’ নতুন, একে আর দেখে নি কোথাও, সে অথবা অন্য কেউ

একবার হিয়া-পিয়া-রিয়াকে প্রথমা-দ্বিতীয়া-তৃতীয়া ভেবে রচা হয়ে গিয়েছিল অসম্ভব এক স্বপ্নসেতু, মনে পড়ে তার, মানসিক সেই চাপেই হবে হয়ত, সহসাই দিয়ে বসে সাড়া বাঁকা দৃষ্টিডাকে, একবার মাত্র বলায় রাজি হওয়া ঠিক নয় কোনো কাজে, তবু কী যেন এক টানে লাজ ভুলে সে পৌঁছে গিয়ে জ্যামে, হন্যে হয়ে খোঁজে, কিন্তু না, কোথাও কেউ নেই, সবাইকে মনে রাখতে যে পারে না সে, তখন তা বোঝা যায়, বস্তুতই সবস্থানে তাকানো হয় নি ওদের, অথচ যতদূর মনে আসে, আবেগে ঝরঝর হয়ে সবগুলো সত্যডিম ফাটিয়ে দিয়েছিল নিজস্ব উমে, সে হেন কান্নামালা হাহাকার হয়ে অলিতে গলিতে বাজে মনের, আরেকটু ভিতরে যাবার জন্যে আকাঙ্ক্ষা-আকুলতার তবু শেষ নেই মানুষের

ওটা ছিল নিতান্তই এক সহজ সমর্পণ, বুঝতে পারে সে, আবেগ তখন উছলে উঠেছিল দিগ্বিদিকে, তার তখন মূর্ছা যাবার দশা, জগৎ বদলে যায় যেন, দিব্যি চলাফেরায় এ তার অন্যরকম এক মূর্ছানুভূতি, সবাই যেরকম পারে না, পারে কেউ কেউ, কিন্তু কী নির্মম যে ওই প্রাণকে আরেকদিন সে না-ও চিনতে পারে, ভিড়ের হৃদয়ে বেশ লজ্জার সঞ্চার হবে যদি নাই-ই ঠিক চিনতে পারে, ভাবে সে

চোখজোড়া নাকি জগৎ মাতারি তার, ফস্কায় না কোনো খণ্ড সুন্দরও, লোকমুখে এসব রটে যাবার পর কার্যত যার-তার-দিকে আর ঠিক চোখে তাকানোই হয় নি, সত্যিই যদি কেউ বাণে পড়ে বসে, কী করে সামলাবে সব, শেষমেষ দুর্বল স্বপ্নে সবকিছু জানতে-বুঝতে নিজে হয়ে ওঠে অবদমনজনিত এক পর্বতারোহী, সে তখন এত উঁচুতে যে সবাই একসময় ফিরে যায়, এমনকি দেখে বহুবল্লভারাও পশ্চাদ্দেশ দেখাতে শুরু করেছে, শেষে জানা কথা ওরাও ফেরাবে তাকে

কল্পনার মতো সত্য এ ব্যাকুল রাতে সে কি তবে আরেকবার পথে বেরুবে কুয়াশার মাথাল পরে, প্রান্তরে কড়ুই পাতার মতো ছ’ড়ে থাকা গানগুলো কুড়িয়ে বাড়িয়ে কি আরো কিছু বাগান সাজাবে, এসব দ্বিধা-দ্বন্দ্বের জবাব খুঁজে পাচ্ছে না যখন, তখন সামনে এসে দাঁড়ায় রাগান্বিত লালচোখ কৃষ্ণাঙ্গ চন্দ্রমুখী, ছাদের নিচে ভৌতিক স্বর তার, বলে-- ‘আমাকে তুমি চেন না!’, আকস্মিকতায় কুঁকড়ে গেল সে, ফচকে গেল, চিনবে কী, তার চোখের দিকে তাকাতেই পারে না, তাকাতেই পারে না

No comments: